WB Govt Krishi Scheme: পশ্চিমবঙ্গ কৃষিভিত্তিক রাজ্য, তাই রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কৃষকদের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার নতুন এক প্রকল্পের সূচনা করেছেন যার মাধ্যমে কৃষকদের বার্ষিক ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়াও ২ লক্ষ টাকার জীবন বীমার সুবিধা প্রদান করা হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। এই প্রকল্প আসার পর থেকে কৃষকদের মধ্যে বেশ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো বহু কৃষক প্রকল্পের সঙ্গে সঠিক পরিচিত না হওয়ায় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই আপনি এবং আপনার পরিচিত পরিজনদের মধ্যে কারো জমি থাকলেই আপনারা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। আজকের প্রতিবেদনে রাজ্য সরকারের নতুন এই প্রকল্প সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করতে চলেছি। আগ্রহীরা প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত দেখে আবেদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন।
মাসিক ১০ হাজার টাকার প্রকল্প:
পশ্চিমবঙ্গ কৃষিভিত্তিক রাজ্য হলেও বর্তমানে কৃষকদের দূরবস্থার শেষ নেই। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে উদ্যমুখী দাম কৃষকদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এরপরেও উৎপাদিত শস্যের সঠিক বাজার মূল্য না পাওয়ায় কৃষি কাজের প্রতি অনীহার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বর্তমানে সকলেই কৃষি কাজ ছেড়ে অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে। তবে কৃষকদের যেহেতু অন্নদাতা বলা হয়ে থাকে তাই তারা কৃষি কাজ ছেড়ে দিলে মানুষের অন্নের সংস্থান ঘটবে কি করে। তাই বর্তমানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একাধিক নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষিকাজের প্রতি উৎসাহিত করতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য এমনই এক জনপ্রিয় প্রকল্পের সূচনা করেছেন, যার নাম হল কৃষক বন্ধু প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা বার্ষিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সরকারি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও কৃষি কাজ করাকালীন দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে তাদের জন্য রয়েছে দু লক্ষ টাকা পর্যন্ত জীবন বীমার সুবিধা।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মূল লক্ষ্য:
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হলো কৃষকদের সংগঠিত করে কৃষি কাজে আরও বেশি উৎসাহিত করা। বর্তমানে কৃষি শস্যের সঠিক দাম না পাওয়ায় কৃষকদর মধ্যে বেশ হতাশার সঞ্চার হয়েছে। অনেকে কৃষি কাজ ছেড়ে অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। রাজ্যের যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ কিছু কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাই এই বিপুল সংখ্যক কৃষকদের মাঝে কৃষি কাজের প্রতি উৎসাহিত করে তোলার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সূচনা করেছেন। এছাড়াও চাষের সময় বীজ, সার বা অন্যান্য খরচ মেটাতে কৃষকরা প্রায়ই সমস্যায় পড়েন। এই সাহায্য দিয়ে তারা সহজেই চাষের মৌসুমে প্রয়োজনীয় ব্যয় সামলাতে পারেন। কৃষিকাজ চলাকালীন কৃষকদের অস্বাভাবিক মৃত্যু অথবা দুর্ঘটনা জনিত কারণের জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দু লক্ষ টাকার জীবন বীমার সুবিধাও রয়েছে।
কৃষক বন্ধুর প্রকল্পে সুবিধা:
কৃষক বন্ধু প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে চালু হয়েছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের কৃষি বিভাগ (Agricultural Department) দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি একর জমির জন্য সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা বছরে সাহায্য দেওয়া হয়। ন্যূনতম সাহায্য হলো ৪,০০০ টাকা প্রতি বছর। ২০২৫ সালের অর্থবছরে রাজ্য সরকার কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য ২,৯৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। অর্থ দুটি কিস্তিতে বিতরণ করা হয়। খরিফ মৌসুমে জুলাই-আগস্ট মাসে একটি কিস্তি আসে। রবি মৌসুমে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়া হয়। টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই, তাই দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কৃষকরা জীবন বীমা (Life Insurance Policy) সুবিধা পান। যদি কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, পরিবার ২ লক্ষ টাকা পায়। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি, এবং কোনো প্রিমিয়াম দিতে হয় না। কৃষকদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
আবেদন যোগ্যতা:
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে সকলেই আবেদন জানাতে পারবেন না, এখানে আবেদনের জন্য বেশ কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে, যেমন –
কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আবেদন করতে (Krishak Bandhu Scheme apply online) আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর হতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আবেদন কারির জমির মালিক বা বৈধ বর্গাদার হতে হবে। এছাড়াও পরিচয় পত্র হিসেবে যাবতীয় নথিপত্র এবং একটি বৈধ ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া:
অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে আবেদন করা যায়। অফলাইন আবেদনের জন্য আপনার পঞ্চায়েত অথবা বিডিও অফিস থেকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আবেদনের ফরমটি সংগ্রহ করুন। ফর্মে উল্লেখিত যাবে তো তথ্য পূরণ করে নির্দিষ্ট ঠিক নথিপত্র সমেত জমা করতে হবে। এছাড়াও আপনারা চাইলে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মাধ্যমে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে জমা করতে পারবেন। বর্তমানে রাজ্য সরকার অনলাইন পোর্টাল চালু করতে চলেছে যেখানে ঘরে বসেই আপনারা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।
এই প্রকল্প সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে আপনারা সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা সরাসরি পঞ্চায়েত বা ভিডিও অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।











