WB SIR Checking Start: এবার বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গ চালু হয়ে গেল স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রোগ্রাম।ভারতীয় ইলেকশন কমিশনের অফিসে ইতিমধ্যে গতকাল ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আজ থেকে এটি কার্যকর করা হবে। এমন সময় সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন যে কোন ডকুমেন্টস থাকলে একটাই সবকিছুর প্রমাণ দিবে। আজকের এই প্রতিবেদনে স্পেশাল ইনটেনশিপ রিভিশন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে কিভাবে সম্পন্ন হবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট ঘোষণা
নির্বাচন কমিশনের মতে, আধার কার্ডকে ভোটার তালিকার সঙ্গে সংযুক্ত করা গেলেও তা কখনোই নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। জ্ঞানেশ কুমার জানান, কিছু মানুষ ভুল ধারণায় ভুগছেন যে আধার থাকলেই নাগরিকত্ব প্রমাণিত হয়, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল। আধার আইন (Aadhaar Act) অনুযায়ী, এই কার্ড শুধুমাত্র পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
তিনি বলেন, “আমরা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য আধার কার্ডের উপর নির্ভর করতে পারি না। এটি কোনো ব্যক্তির জন্মস্থান বা নাগরিক পরিচয় নিশ্চিত করে না। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা প্রক্রিয়া।”
বিহার থেকে শুরু নতুন EPIC কার্ড ইস্যু
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিহারে ইতিমধ্যেই নতুন EPIC কার্ড (Voter ID Card) ইস্যু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে ভোটারদের নাম, ঠিকানা এবং ভোটকেন্দ্র সম্পর্কিত পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগকে একটি মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সারা দেশজুড়ে প্রয়োগ করা হবে।
কমিশনের উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের তথ্য সর্বদা হালনাগাদ রাখা এবং ভোট প্রক্রিয়ায় কোনো বিভ্রান্তি না থাকা। এজন্য প্রতিটি রাজ্যে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) মাধ্যমে তথ্য যাচাই ও আপডেটের কাজ চলবে।
পুরনো ভোটার তালিকা দেখার সুযোগ
নির্বাচন কমিশন ভোটারদের জন্য পুরনো ভোটার তালিকা দেখার সুযোগও করে দিয়েছে। এখন সাধারণ নাগরিকরা voters.eci.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৪ সালের ভোটার তালিকা দেখতে পারবেন। এই ব্যবস্থা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এই প্রক্রিয়ায় রাজ্য ও জেলা নির্বাচন করে, নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে সার্চ করলে আগের তালিকা দেখা যাবে। এছাড়াও, ভোটাররা চাইলে নিজেদের নাম আধার নম্বরের সঙ্গে লিঙ্ক করতে পারবেন, তবে এটি ঐচ্ছিক (Optional)।
আধার কার্ডের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কমিশনের ব্যাখ্যা
কমিশন স্পষ্টভাবে বলেছে, আধার কার্ডের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি সর্বজনীন প্রমাণপত্র নয়। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে বলা হয়েছে যে আধারকে নাগরিকত্ব, জন্মতারিখ বা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
মূল বিষয়গুলো হল:
- নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়: আধার আইনের ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আধার কার্ড কোনোভাবেই ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
- জন্মতারিখের প্রমাণ নয়: আদালতের রায়ে স্পষ্ট হয়েছে, আধারে উল্লেখিত জন্মতারিখ শুধুমাত্র ব্যবহারিক তথ্য, এটি আইনি প্রমাণ নয়।
- পরিচয়পত্র মাত্র: আধার কার্ড একটি সাধারণ পরিচয়পত্র (Proof of Identity) হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, প্যান লিঙ্ক করা বা সরকারি স্কিমে আবেদন করার ক্ষেত্রে।
UIDAI-এর নির্দেশিকা ও আধার কার্ডে উল্লেখ
বর্তমানে UIDAI-এর ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে আধার কার্ড নাগরিকত্ব, জন্মস্থান বা জন্মতারিখের প্রমাণ নয়। যখন কেউ নতুন আধার ডাউনলোড করেন, সেখানে নিচে লেখা থাকে — “This Aadhaar is not proof of citizenship or date of birth.”
এই সতর্কবার্তা অনেকের জন্য নতুন হলেও এটি বহু আগেই আইনি ভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে। UIDAI জানিয়েছে, আধার শুধুমাত্র সনাক্তকরণের একটি ডিজিটাল মাধ্যম এবং এটি অন্য কোনো আইনি পরিচয়পত্রের বিকল্প নয়।
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় নতুন ব্যবস্থা
নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এখন ভোটাররা অনলাইনে নাম যাচাই, ঠিকানা সংশোধন বা নতুন নাম সংযোজন করতে পারেন। BLO অফিসারদের মাধ্যমে মাটির স্তরে তথ্য যাচাই করে পরে সেটি চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ভুল তথ্য থাকলে তা ঠিক করা সহজ হবে এবং জাল ভোটার তালিকা তৈরি রোধ করা যাবে। কমিশন জানিয়েছে, নাগরিকদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের হলেও প্রত্যেক ভোটারকেও সচেতন হতে হবে।
কেন আধার নাগরিকত্ব প্রমাণ নয় – আইনি ভিত্তি
ভারতের আধার আইন ২০১৬ অনুযায়ী, আধারের উদ্দেশ্য হল নাগরিকদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ইউনিক নম্বর প্রদান করা। কিন্তু এই আইন কোথাও নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলে না।
ধারা ৯-এ স্পষ্ট বলা হয়েছে:
“The Aadhaar number or the authentication thereof shall not, by itself, confer any right of, or be proof of, citizenship or domicile.”
এর মানে দাঁড়ায়, আধার নম্বর থাকা মানেই আপনি ভারতীয় নাগরিক — এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এটি শুধু সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন মোবাইল ভেরিফিকেশন বা সাবসিডি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্টীকরণ
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট আধার সংক্রান্ত একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়। সেখানে আদালত জানায়, আধার বাধ্যতামূলক করা যাবে না এবং এটি নাগরিকত্ব বা জন্মতারিখের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালত আরও বলে, আধারকে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করলে তা সংবিধানের ১৪ ও ২১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে। ফলে নির্বাচন কমিশনের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত আদালতের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে প্রভাব
নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যে বড় প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ (Special Summary Revision) চলছে, যেখানে আধার ও ভোটার আইডি লিঙ্কিংয়ের বিষয়টি আলোচনায় ছিল।
এখন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশের পর, BLO দেরকে আধারকে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।
নাগরিকদের জন্য কমিশনের বার্তা
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিজের ভোটার আইডি হালনাগাদ রাখা এবং সঠিক তথ্য প্রদান করা। আধার নম্বর দেওয়া ঐচ্ছিক হলেও ভোটার তালিকায় নিজের নাম সঠিকভাবে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
কমিশন আরও বলেছে, “আপনার নাগরিকত্ব যাচাই হবে জন্মসনদ, পাসপোর্ট, বা অন্যান্য বৈধ নথির মাধ্যমে। আধার এখানে সহায়ক নয়।”
ভবিষ্যতে আধার ব্যবহারে কড়া নিয়ম
UIDAI ও নির্বাচন কমিশন একত্রে কাজ করছে যাতে আধারের অপব্যবহার না হয়। ভবিষ্যতে আধার ব্যবহারে আরও কড়া নিয়ম আসতে পারে। যারা ভুয়া নথি দিয়ে আধার তৈরি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও, কমিশন পরিকল্পনা করছে ভোটার তালিকায় বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের নতুন ব্যবস্থা চালু করতে, যাতে জাল ভোটারদের শনাক্ত করা যায়।
তাই এক্ষেত্রে আপনার কাছে এই সমস্ত ডকুমেন্টগুলি থাকলেই আপনার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন এর ক্ষেত্রে কোন রকম সমস্যা হবে না।











