WB Part Time Employees Salary Increase: আমরা সকলে জানি সামনে দুর্গাপুজো আসছে। রাজ্যজুড়ে যখন উৎসবের আমেজ, ঠিক তখনই নবান্ন থেকে এল এক খুশির নোটিশ। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ও বিভিন্ন দফতরে নিযুক্ত কিছু কর্মীদের ভাতা একধাক্কায় বাড়িয়ে দেওয়ার নোটিশ জারি করেছে। এতদিন এই কর্মীরা যেখানে খুব সামান্য পেতেন, এখন থেকে তাঁরা পাবেন মাসে তার দ্বিগুণের বেশি। অর্থাৎ এক ₹৩০০০ বাড়ানো হল পারিশ্রমিক।
এই সিদ্ধান্ত ১ আগস্ট, ২০২৫ অনুযায়ী কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য অর্থ দফতর।
কারা এই ভাতা পান?
এই ভাতা মূলত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি বিভাগের অধীনে থাকা চুক্তিভিত্তিক বা পার্ট টাইম কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার অস্থায়ী কর্মচারীরাও এই ভাতার অন্তর্ভুক্ত হবে বলে জানানো হয়।
জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত কর্মীরা সম্পূর্ণ সময় নয়, বরং দিনে নির্দিষ্ট কিছু সময় কাজ করে থােন তারা, যাঁদের সরকারি কর্মী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ করা হয়নি। তাদের জন্যই এই ভাতা চালু করা হয়েছিল ২০১৪ সাল থেকে।
কী বলছে সরকারি বিজ্ঞপ্তি?
অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বুধবার) একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে:
- ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে নতুন হারে ভাতা কার্যকর হবে নিদিষ্ট কর্মীদের জন্য
- পূর্ববর্তী ₹২০০০ মাসিক ভাতা এখন তা ₹৫০০০ করা হয়েছে
- বিজ্ঞপ্তিটি সমস্ত জেলা শাসক, ব্লক অফিসার, সরকারি দপ্তর ও সংস্থা-র কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়
- সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আগামী মাস থেকেই নতুন হারে বেতন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে
কেন এই সিদ্ধান্ত এখন?
এই সিদ্ধান্তের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
১. দুর্গাপুজো সামনে
সামনে দুর্গাপুজো পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব। বহু পার্ট টাইম কর্মী বাড়তি খরচ, বাচ্চাদের জামাকাপড়, উপহার, খাবারদাবার ইত্যাদির জন্য এই সময় কিছু অতিরিক্ত টাকার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। সেই দিকটি বিবেচনায় রেখেই নবান্ন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২. মূল্যবৃদ্ধির চাপ
বিভিন্ন দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন চালের দাম, ডালের দাম, রান্নার গ্যাস, বাসভাড়া – সব কিছুই বেড়েই চলেছে । মাত্র ₹২০০০ মাসিক ভাতা দিয়ে সংসার চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এই ₹৩০০০ বৃদ্ধি তাদের অনেকটাই স্বস্তি দেবে।
৩. দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল
এই পার্ট টাইম কর্মীরা বহুদিন ধরেই ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছিলেন বিভিন্ন মঞ্চ থেকে। অবশেষে সেই দাবির প্রতি সরকার সাড়া দিয়ে নোটিশ জারি করেছে ।
কতজন এই সুবিধা পাবেন?
নবান্ন সূত্রে খবর অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১.২ লক্ষ পার্ট টাইম এমন কর্মী রয়েছেন যাঁরা এই ভাতা পেতে চলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন:
- স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মী
- অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা
- গ্রামীণ শিক্ষা কর্মী
- কৃষি সহকারী
- গ্রামীণ লাইব্রেরি কর্মচারী
- চুক্তিভিত্তিক ক্লার্ক কর্মূ
- পিয়ন ও দফতরি
তাদের সবারই মাসিক ₹৫০০০ করে ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে , যা আগে ছিল মাত্র ₹২০০০।
নতুন ভাতা বৃদ্ধির হিসাব
| পূর্ববর্তী ভাতা | নতুন ভাতা | বৃদ্ধি হয়েছে | কার্যকর হওয়ার তারিখ |
|---|---|---|---|
| ₹২০০০ | ₹৫০০০ | ₹৩০০০ | ১ আগস্ট, ২০২৫ |
সুতরাং এখন একজন পার্ট টাইম কর্মী বছরে পাবেন ₹৬০,০০০ পেতে চলেছেন, যেখানে আগে পেতেন ₹২৪,০০০ দেওয়া হত। প্রায় ২.৫ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে বার্ষিক আয়ের।
রাজ্যের অর্থনৈতিক বোঝা কী বাড়বে?
এই ভাতা বৃদ্ধির ফলে রাজ্য সরকারকে বছরে প্রায় ₹৪২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে নবান্ন বলছে, “এই খরচ মানুষের কল্যাণে হবে, এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে আপস করা যাবে না বলে জানানো হয়।”
ভবিষ্যতে কী আরও বাড়বে?
নবান্ন সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী দিনে এই ভাতা আরও বাড়ানোর কথা ভাববে সরকার। অনেক সংগঠন চাইছে যেন পার্ট টাইম কর্মীদের আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হয় যেমন:
- পিএফ
- স্বাস্থ্য বিমা
- পেনশন স্কিম
এর মতো সুযোগও দেওয়া হয়।
কীভাবে নতুন ভাতা পাওয়া যাবে?
এই বাড়তি ₹৩০০০ পাবেন সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এজন্য আলাদা করে আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। যাঁরা ইতিমধ্যে এই ভাতা পাচ্ছেব, তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই নতুন হারে টাকা ঢুকবে।
তবে কারো যদি:
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকে
- নামের ভুল থেকে থাকে
- আধার লিংক না করা থাকে
তাহলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে তথ্য সংশোধন করে নিতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায়, নবান্নের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক পার্ট টাইম কর্মীদের জন্য এক বিশাল উৎসাহের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু পুজোর আগে অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, এটি এক ধরণের স্বীকৃতিও, তাদের অবদানের প্রতি হতে হতে পারে। সমাজের অগ্রগতিতে তাদের অবদানকে সম্মান জানানো, এই ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারই প্রতিফলন করা হয়েছে।
